পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “পাতাবাহার” । এখানে লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী’ গল্পটি দেওয়া হল ।
তালনবমী – গল্প
ঝমঝম বর্ষা ।
ভাদ্র মাসের দিন । আজ দিন পনেরো ধরে বর্ষা নেমেচে, তার আর বিরামও নেই, বিশ্রামও নেই । ক্ষুদিরাম ভট্চাজের বাড়ি আজ দুদিন হাঁড়ি চড়ে নি ।
ক্ষুদিরাম সামান্য আয়ের গৃহস্থ । জমিজমার সামান্য কিছু আয় এবং দু-চার ঘর শিষ্যযজমানের বাড়ি ঘুরে-ঘুরে কায়ক্লেশে সংসার চলে । এই ভীষণ বর্ষায় গ্রামের কত গৃহস্থের বাড়িতেই পুত্র-কন্যা অনাহারে আছে,-ক্ষুদিরাম তো সামান্য গৃহস্থ মাত্র ! যজমান-বাড়ি থেকে যে কটি ধান এসেছিল তা ফুরিয়ে গিয়েচে । -ভাদ্রের শেষে আউশ ধান চাষিদের ঘরে উঠলে তবে আবার কিছু ধান ঘরে আসবে, ছেলেপুলেরা দুবেলা পেট পুরে খেতে পাবে ।
নেপাল ও গোপাল ক্ষুদিরামের দুই ছেলে । নেপালের বয়স বছর বারো, গোপালের দশ । কদিন থেকে পেট ভরে না খেতে পেয়ে ওরা দুই ভায়েই সংসারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠেচে ।
নেপাল বললে, ‘এই গোপলা, খিদে পেয়েচে না তোর ?’
গোপাল ছিপ চাঁচতে চাঁচতে বললে, ‘হু’, দাদা ।’
‘মাকে গিয়ে বল; আমারও পেট চুঁই চুঁই করচে ।
Read Also:
তালনবমী – প্রশ্ন ও উত্তর | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
‘মা বকে; তুমি যাও দাদা !’
‘বকুক গে । আমার নাম করে মাকে বলতে পারবি নে ?’
এমন সময় পাড়ার শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনিকে আসতে দেখে নেপাল ডাকলে, ‘ও চুনি, শুনে যা !’
চুনি বয়সে নেপালের চেয়ে বড়ো । অবস্থাপন্ন গৃহস্থের ছেলে, বেশ চেহারা । নেপালের ডাকে সে ওদের উঠোনের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে বললে, ‘কি ?’
‘আয় না ভেতরে ।’
‘না যাব না, বেলা যাচ্ছে । আমি জটি পিসিমাদের বাড়ি যাচ্ছি । মা সেখানে রয়েছে কিনা, ডাকতে যাচ্ছি ।’
‘কেন, তোর মা এখন সেখানে যে ?’
‘ওদের ডাল ভাঙতে গিয়েচে । তালনবমীর বের্তো আসচে এই মঙ্গলবার; ওদের বাড়ি লোকজন খাবে ।”
‘সত্যি ?’
‘তা জানিস নে বুঝি ? আমাদের বাড়ির সবাইকে নেমন্তন্ন করবে, গাঁয়েও বলবে ।’
‘আমাদেরও করবে ?’
‘সবাইকে যখন নেমন্তন্ন করবে, তোদের কি বাদ দেবে ?’
Read Also:
গল্পবুড়ো – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বুনো হাঁস – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
চুনি চলে গেলে নেপাল ছোটো ভাইকে বললে, ‘আজ কী বার রে ? তা তুই কি জানিস ? আজ শুক্কুরবার বোধ হয়-মঙ্গলবারে নেমন্তন্ন ।’
গোপাল বললে, ‘কী মজা ! না দাদা ?’
‘চুপ করে থাক,-তোর বুদ্ধি-শুদ্ধি নেই; তালনবমীর বের্তোয় তালের বড়া করে, তুই জানিস ?’
গোপাল সেটা জানত না ! কিন্তু দাদার মুখে শুনে খুব খুশি হয়ে উঠল । সত্যিই তা যদি হয়, তবে সে সুখাদ্য খাবার সম্ভাবনা বহুদূরবর্তী নয়, ঘনিয়ে এসেচে কাছে । আজ কী বার সে জানে না, সামনের মঙ্গলবারে-নিশ্চয় তার আর বেশি দেরি নেই ।
দাদার সঙ্গে বাড়ি যাবার পথে পড়ে জটি পিসিমার বাড়ি । নেপাল বললে, ‘তুই দাঁড়া, ওদের বাড়ি ঢুকে দেখে আসি । ওদের বাড়ি তালের দরকার হবে, যদি তাল কেনে !’
এ গ্রামের মধ্যে তালের গাছ নেই । মাঠে প্রকাণ্ড তালদিঘি, নেপাল সেখান থেকে তাল কুড়িয়ে এনে গাঁয়ে বিক্রি করে ।
জটি পিসিমা সামনেই দাঁড়িয়ে । তিনি গ্রামের নটবর মুখুজ্যের স্ত্রী, ভালো নাম হরিমতী; গ্রামসুদ্ধ ছেলে-মেয়ে তাঁকে ডাকে জটি পিসিমা ।
Read Also:
দারোগাবাবু এবং হাবু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
এতোয়া মুণ্ডার কাহিনি – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
পিসিমা বললেন, ‘কী রে ?’
‘তাল নেবে পিসিমা ?’
‘হ্যাঁ, নেব বই কী । আমাদের তো দরকার হবে মঙ্গলবার ।’
ঠিক এই সময় দাদার পিছু পিছু গোপালও এসে দাঁড়িয়েচে । জটি পিসিমা বললেন, ‘পেছনে কে রে ? গোপাল ? তা সন্ধেবেলা দুই ভায়ে গিয়েছিলি কোথায় ?’
নেপাল সলজ্জমুখে বললে, ‘মাছ ধরতে ।’
‘পেলি ?’
‘ওই দুটো পুঁটি আর একটা ছোটো বেলে… তাহলে যাই পিসিমা ?’
‘আচ্ছা, এসো গে বাবা, সন্ধে হয়ে গেল; অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় বর্ষাকালে ।’
জটি পিসিমা তাল সম্বন্ধে আর কোনো আগ্রহ দেখালেন না বা তালনবমীর ব্রত উপলক্ষ্যে তাদের নিমন্ত্রণ করার উল্লেখও করলেন না, -যদিও দু’জনেরই আশা ছিল হয়তো জটি পিসিমা তাদের দেখলেই নিমন্ত্রণ করবেন এখন । দরজার কাছে গিয়ে নেপাল আবার পেছন ফিরে জিগ্যেস করলে, ‘তাল নেবেন তা’হলে ?’
‘তাল ? তা দিয়ে যেও বাবা । কটা করে পয়সায় ?’
Read Also:
পাখির কাছে ফুলের কাছে – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বিমলার অভিমান – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
‘দুটো করে দিচ্ছি পিসিমা । তা নেবেন আপনি, তিনটে করেই নেবেন ।
‘বেশ কালো হেঁড়ে তাল তো ? আমাদের তালের পিঠে হবে তালনবমীর দিন-ভালো তাল চাই ।’
‘মিশকালো তাল পাবেন । দেখে নেবেন আপনি ।’
গোপাল বাইরে এসেই দাদাকে বললে, ‘কবে তাল দিবি দাদা ?’
‘কাল ।’
‘তুই ওদের কাছে পয়সা নিস নে দাদা ।’
নেপাল আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘কেন রে ?’
‘তাহলে আমাদের নেমন্তন্ন করবে, দেখিস এখন ।’
‘দূর, তা হয় না ! আমি কষ্ট করে তাল কুড়োব-আর পয়সা নেব না ?’
রাত্রে বৃষ্টি নামে । হু হু বাদলার হাওয়া সেই সঙ্গে । পুবদিকের জানলার কপাট দড়িবাঁধা; হাওয়ায় দড়ি ছিঁড়ে সারারাত খট্ খট্ শব্দ করে ঝড়বৃষ্টির দিনে । গোপালের ঘুম হয় না, তার যেন ভয় ভয় করে । সে শুয়ে শুয়ে ভাবচে-দাদা তাল যদি বিক্রি করে, -তবে ওরা আর নেমন্তন্ন করবে না ! তা কখনো করে ?
Read Also:
ছেলেবেলা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাঠ মানে ছুট – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
খুব ভোরবেলা উঠে গোপাল দেখলে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে । কেউই তখনও ওঠেনি । রাত্রের বৃষ্টি থেমে গিয়েচে, -সামান্য একটু টিপ টিপ বৃষ্টি পড়চে । গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদিঘির ধারে । মাঠে এক হাঁটু জল আর কাদা । গ্রামের উত্তরপাড়ার গণেশ কাওরা লাঙল ঘাড়ে এই এত সকালে মাঠে যাচ্ছে । ওকে দেখে বললে, ‘কী খোকাঠাকুর, যাচ্ছ কনে এত ভোরে ?’
‘তাল কুড়ুতে দিঘির পাড়ে ।’
‘বড্ড সাপের ভয় খোকাঠাকুর ! বর্ষাকালে ওখানে যেও না একা-একা ।’
গোপাল ভয়ে ভয়ে দিঘির তালপুকুরের তালের বনে ঢুকে তাল খুঁজতে লাগল । বড়ো আর কালো কুচকুচে একটা মাত্র তাল প্রায় জলের ধারে পড়ে; সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ফিরে আসবার পথে আরও গোটা-তিনেক ছোটো তাল পাওয়া গেল । ছেলেমানুষ, এত তাল বয়ে আনার সাধ্য নেই, দুটি মাত্র তাল নিয়ে সোজা একেবারে জটি পিসিমার বাড়ি হাজির ।
জটি পিসিমা সবেমাত্র সদর দোর খুলে দোরগোড়ায় জলের ধারা দিচ্ছেন, ওকে এত সকালে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ‘কী রে খোকা ?’
গোপাল একগাল হেসে বললে, ‘তোমার জন্যে তাল এনিচি পিসিমা !’
জটি পিসিমা আর কিছু না বলে তাল দুটো হাতে করে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলেন ।
Read Also:
পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ঝড় – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
গোপাল একবার ভাবলে, তালনবমী কবে জিগ্যেস করে; কিন্তু সাহসে কুলোয় না তার । সারাদিন গোপালের মন খেলাধুলোর ফাঁকে কেবলই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে । ঘন বর্ষার দুপুরে মুখ উঁচু করে দেখে-নারকোল গাছের মাথা থেকে পাতা বেয়ে জল ঝরে পড়চে, বাঁশঝাড় নুয়ে পড়চে বাদলার হাওয়ায়, বকুলতলার ডোবায় কটকটে ব্যাঙের দল থেকে থেকে ডাকচে ।
গোপাল জিগ্যেস করলে, ‘ব্যাঙগুলো আজকাল তেমন ডাকে না কেন মা ?’
গোপালের মা বলেন, ‘নতুন জলে ডাকে, এখন পুরোনো জলে তত আমোদ নেই ওদের ।’
‘আজ কী বার, মা ?’
‘সোমবার । কেন রে ? বারের খোঁজে তোর কী দরকার ?’
‘মঙ্গলবারে তালনবমী, না মা ?’
‘তা হয়তো হবে । কী জানি বাপু ! নিজের হাঁড়িতে চাল জোটে না, তালনবমীর খোঁজে কী দরকার আমার ?’
সারাদিন কেটে গেল । নেপাল বিকেলের দিকে জিগ্যেস করলে, ‘জটি পিসিমার বাড়িতে তাল দিইছিলি আজ সকালে ?’ কোথায় পেলি তুই ? আমি তাল দিতে গেলে পিসি বললেন, ‘গোপাল তাল দিয়ে গেচে, পয়সা নেয়নি ।’ – কেন দিতে গেলি তুই ? একটা পয়সা হলে দুজনে মুড়ি কিনে খেতাম !’
‘ওরা নেমন্তন্ন করবে, দেখিস দাদা, কাল তো তালনবমী !’
Read Also:
মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মায়াতরু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
‘সে এমনিই নেমন্তন্ন করবে, পয়সা নিলেও করবে । তুই একটা বোকা !’
‘আচ্ছা দাদা, কাল তো মঙ্গলবার না ?’
‘হুঁ ।’
রাত্রে উত্তেজনায় গোপালের ঘুম হয় না । বাড়ির পাশের বড়ো বকুল গাছটায় জোনাকির ঝাঁক জ্বলচে; জানালা দিয়ে সেদিকে চেয়ে চেয়ে সে ভাবে-কাল সকালটা হলে হয় । কতক্ষণে যে রাত পোহাবে !…
জটি পিসিমা আদর করে ওকে বললেন খাওয়ানোর সময়, ‘খোকা, কাঁকুড়ের ডাল্না আর নিবি ? মুগের ডাল বেশি করে মেখে নে ।’ জটি পিসিমার বড়ো মেয়ে লাবণ্যদি একখানা থালায় গরমগরম তিলপিটুলি ভাজা এনে ওর সামনে ধরে হেসে বললে, ‘খোকা, কখানা নিবি তিলপিটুলি ?’ -বলেই লাবণ্যদি থালাখানা উপুড় করে তার পাতে ঢেলে দিলে । তারপর জটি পিসিমা আনলেন পায়েস আর তালের বড়া । হেসে বললেন, ‘খোকা যে তাল কুড়িয়ে দিয়েছিলি, তাই পায়েস হল !… খা, খা, খুব খা; -আজ যে তালনবমী রে !’ …কত কী চমৎকার ধরনের রাঁধা তরকারির গন্ধ বাতাসে ! খেজুর গুড়ের পায়েসের সুগন্ধ বাতাসে ! গোপালের মন খুশি ও আনন্দে ভরে উঠল । সে বসে বসে খাচ্ছে, কেবলই খাচ্ছে ।…সবারই খাওয়া শেষ, ও তবুও খেয়েই যাচ্ছে…লাবণ্যদি হেসে হেসে বলছে, ‘আর নিবি তিলপিটুলি?’…
Read Also:
ফণীমনসা ও বনের পরি – নাটক | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
‘ও গোপাল?’
হঠাৎ গোপাল চোখ চেয়ে দেখলে-জানালার পাশে বর্ষার জলে ভেজা ঝোপঝাড়, তাদের সেই আতা গাছটা…সে শুয়ে আছে তাদের বাড়িতে । মার হাতের মৃদু ঠেলায় ঘুম ভেঙেচে, মা পাশে দাঁড়িয়ে বলচেন, ‘ওঠ ওঠ, বেলা হয়েচে কত ! মেঘ করে আছে তাই বোঝা যাচ্ছে না !’
বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে সে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল ।
‘আজ কী বার মা.. ?’
‘মঙ্গলবার।’
তাও তো বটে ! আজই তো তালনবমী ! ঘুমের মধ্যে ওসব কি হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল ?
বেলা আরও বাড়ল, ঘন মেঘাচ্ছন্ন বর্ষার দিনে যদিও বোঝা গেল না বেলা কতটা হয়েচে । গোপাল দরজার সামনে একটা কাঠের গুঁড়ির ওপর ঠায় বসে রইল । বৃষ্টি নেই একটুও, মেঘ-জমকালো আকাশ । বাদলের সজল হাওয়ায় গা শিরশির করে । গোপাল আশায় আশায় বসে রইল বটে, কিন্তু কই, পিসিমাদের বাড়ি থেকে কেউ তো নেমন্তন্ন করতে এল না !
অনেক বেলায় তাদের পাড়ার জগবন্ধু চক্কোত্তি তাঁর ছেলেমেয়ে নিয়ে সামনের পথ দিয়ে কোথায় যেন চলেছেন । তাদের পেছনে রাখাল রায় ও তাঁর ছেলে সানু; তার পেছনে কালীবর বাঁড়ুজ্যের বড়ো ছেলে পাঁচু আর ও-পাড়ার হরেন…
গোপাল ভাবলে এরা যায় কোথায় ?
Read Also:
বোকা কুমিরের কথা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাস্টারদা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
এ-দলটি চলে যাবার কিছু পরে বুড়ো নবীন ভট্চাজ ও তার ছোটো ভাই দীনু, সঙ্গে একপাল ছেলেমেয়ে নিয়ে চলেছে ।
দীনু ভট্চাজের ছেলে কুড়োরাম ওকে দেখে বললে, ‘এখানে বসে কেন রে ? যাবিনে ?’
গোপাল বললে, ‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা ?’
‘জটি পিসিমাদের বাড়ি তালনবমীর নেমন্তন্ন খেতে । করেনি তোদের ? ওরা বেছে বেছে বলেছে কি না, সবাইকে তো বলেনি…’
গোপাল হঠাৎ রাগে, অভিমানে যেন দিশেহারা হয়ে গেল । রেগে দাঁড়িয়ে উঠে বললে, ‘কেন করবে না আমাদের নেমন্তন্ন ? আমরা এর পরে যাব…’
রাগ করবার মতো কী কথা সে বলেচে বুঝতে না পেরে কুড়োরাম অবাক হয়ে বললে, ‘বা রে ! তা অত রাগ করিস কেন ? কী হয়েচে ?’
ওরা চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে গোপালের চোখে জল এসে পড়ল-বোধহয় সংসারের অবিচার দেখেই । পথ চেয়ে সে বসে আছে কদিন থেকে ! কিন্তু তার কেবল পথ চাওয়াই সার হল ! তার সজল ঝাপসা দৃষ্টির সামনে পাড়ার হারু, হিতেন, দেবেন, গুট্কে তাদের বাপ-কাকাদের সঙ্গে একে একে তার বাড়ির সামনে দিয়ে জটি পিসিমাদের বাড়ির দিকে চলে গেল…
Read Also:
মিষ্টি – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
একলা – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
আকাশের দুই বন্ধু – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
তালনবমী গল্পের লেখক পরিচিতি:
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) : জন্মস্থান বনগ্রাম, চব্বিশ পরগনা । তাঁর উল্লেখযোগ্য বই – ‘পথের পাঁচালী’, ‘আরণ্যক’, ‘অপরাজিত’, ‘ইছামতী’, ‘দেবযান’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’, ‘কিন্নরদল’ ইত্যাদি । কিশোরদের জন্য রচিত অভিযান বিষয়ক রচনা – ‘চাঁদের পাহাড়’ প্রতিটি বাঙালির অবশ্যপাঠ্য । মৃত্যুর পরে ১৯৫১ সালে তাঁকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্রদান করা হয় ।
পাঠ্য গল্পটি তাঁর ‘তালনবমী’ নামক বই থেকে নেওয়া হয়েছে ।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.
Khub Valo Golpo
Absolutely, it is a very good story.