মাস্টারদা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মাস্টারদা - গল্প

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “পাতাবাহার” । এখানে লেখক অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘মাস্টারদা’ গল্পটি দেওয়া হল ।

মাস্টারদা – গল্প

সাংঘাতিক কাণ্ড । চট্টগ্রাম শহরের অল্পবয়সি কিছু ছেলে এক মাস্টারদাদার বুদ্ধিমতাে ইংরেজ পুলিশের সঙ্গে লড়ে তাদের গােলাবারুদের ভাণ্ডারটিকে দখল করে নিয়েছে । আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সেই অস্ত্রাগারে । আগুন লাগিয়েছে টেলিফোন আর টেলিগ্রাফের অফিসেও । ট্রেনে করে যে শহরে আসবে তারও উপায় নেই । দু-জায়গায় রেলের লাইন ভেঙে ফেলেছে তারা । সেখানে মালগাড়ি উল্টে ট্রেন চলাচল বন্ধ ।

চট্টগ্রাম ইংরেজ-শাসন থেকে মুক্ত, এমন এক ঘােষণা করেছে সেই ছেলের দল । ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে ইংরেজ পুলিশ ঘাঁটিতে উড়ত-থাকা ব্রিটিশ পতাকা – ইউনিয়ান জ্যাক । সেখানে উড়ছে স্বাধীন ভারতের পতাকা ।

ভারতবর্ষ শাসন করতে এসে ইংরেজরা বােধহয় এমন মার এর আগে কমই খেয়েছে । তারা মনের সুখে রাজ্যপাট চালিয়েছে এতদিন । ভারতবাসী দিনের পর দিন খেটে গেছে আর সেই খাটুনির ফল ভােগ করেছে সাদা চামড়ার ইংরেজ । প্রতিবাদ করতে গেলেই এদেশের মানুষের কপালে জুটেছে অত্যাচার । এদেশে রাজত্ব করতে এসে তাদের স্পর্ধা একেবারে আকাশ ছুঁয়েছে । কোনাে কোনাে প্রতিষ্ঠানে সাদা চামড়ার লােক ছাড়া অন্য কারাে ঢােকার অনুমতি নেই । রেস্তোরাঁর গায়ে নােটিশ ঝুলছে – কালাে চামড়ার লােক এবং কুকুরের প্রবেশ নিষেধ ।

এমন অন্যায় বেশিদিন চলে না । প্রতিবাদ হবেই । প্রতিরােধ গড়ে উঠবেই । ঠিক যেন রূপকথার রাজপুত্রদের মতাে লড়াই করে দেশ থেকে দানবদের তাড়াতে চেয়েছে চট্টগ্রামের এই ছেলের দল । তাদের মনে হয়েছে ভারতবর্ষের একটা জায়গায় যুদ্ধ করে যদি ইংরেজদের তাড়ানাে যায়, সারা দেশ জেগে উঠবে । আর সকলেরই তখন মনে হবে তাহলে তাে আমরাও এমনভাবে লড়াই করে ইংরেজদের অত্যাচার বন্ধ করতে পারি । তাদের তাড়াতে পারি । দেশ আমাদের মা । সেই ভারতমাতাকে ইংরেজ-দানবের কবল থেকে মুক্ত করতে পারি । এই ছেলের দলকে দেশের কথা বলে, খেলাধুলাে, বন্দুক-চালানাে শিখিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়বার উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছেন এক অঙ্কের শিক্ষক । তাঁকে সবাই মাস্টারদা বলে ডাকে ।

কে এই মাস্টারদা, যাঁর কথায় ছেলের দল ইংরেজদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়তে পারে ? চট্টগ্রামের মানুষ জানে এই রােগা, সাধারণ চেহারার, ধুতি-পরা মানুষটির নাম সূর্য সেন ।

কেমন মানুষ এই মাস্টারদা ? সবাই কেন তাঁকে এত সম্মান করে ? মাস্টারদা কথা বলেন কম । মজাটা হল, মাস্টারদাকে বাইরে থেকে দেখে বােঝার উপায় নেই তিনি এত বড়াে একজন নেতা । তাঁর পােশাক খুবই সাদাসিধে । বাঙালির ধুতি-পাঞ্জাবি বা ধুতি শার্ট । রঙিন জামা পরেন না । কথা যেমন কম বলেন, হাঁটাচলাতেও শব্দ হয় না প্রায় । তাঁর বাড়ির লােকজনেরা বলেন, খড়ম পায়ে হাঁটলেও তাঁর খটখট আওয়াজ শােনা যায় না । এই যে মানুষটি, চুপচাপ যাঁর ধরন, তিনি কী করে এত ছেলেকে ভারতের মুক্তির নেশায় খেপিয়ে তুললেন, রাইফেল-বন্দুক নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়লেন, এ ভারি আশ্চর্যের কথা ।

Read Also:

গল্পবুড়ো – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বুনো হাঁস – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

দারোগাবাবু এবং হাবু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

এতোয়া মুণ্ডার কাহিনি – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

পাখির কাছে ফুলের কাছে – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বিমলার অভিমান – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ছেলেবেলা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মাঠ মানে ছুট – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ঝড় – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

উমাতারা হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সূর্যকুমার সেন । নতুন মাস্টার, তাই ছেলেরা প্রথমেই বুঝে নিতে চায় লােকটি কেমন । তিনি গম্ভীর ? রাশভারী ? অঙ্ক ভুল হলে কড়া শাস্তি দেন ? না, একটু নরম-সরম, হাসিখুশি ? ছেলেরা অবাক হয়ে দেখল এই মাস্টারমশাই বন্ধুর মতাে হাসিমুখে ছােটো-বড়াে সবার সঙ্গে মেলামেশা করছেন । খুবই সহজ, সাধারণ মানুষ, কিন্তু ঠকাবার উপায় নেই । তাঁর চোখের দিকে তাকালে কিছু লুকোনাে যায় না । তখনও তাে সেরকমভাবে তাঁর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েনি । তবু সেদিন ছাত্রদের মনে হয়েছিল, এ মানুষটি অন্যরকম ! তাঁর কথামতাে ছাত্ররা ভাের চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে ময়দানে গিয়ে ব্যায়াম করত । সংস্কৃত স্তোত্র আবৃত্তি করত । কোনাে কোনাে ভােরবেলায় ছাত্ররা দেওয়ানজি-র পুকুরপাড়ে তাদের প্রিয় অঙ্কের মাস্টারের মেসবাড়িতে পৌঁছে গেলে দেখত, তিনি অনেক আগেই উঠে রামকৃষ্ণ-স্তোত্র গান করছেন । রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দই ছিলেন তাঁর আদর্শ পুরুষ । ছেলেদেরও তিনি এই দুই মনীষীর ভক্তি-ত্যাগ-তেজস্বিতার আদর্শে গড়তে চেয়েছিলেন । তাঁর প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এত প্রিয়, তিনি বলতেন ‘কবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ’ । শুধু বলা নয়, রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা ছিল তাঁর মুখস্থ । পরে জালালাবাদের পাহাড়ে লড়াইয়ের আগেও রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা শুনেছেন তিনি । জেলের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়েছেন, চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করেছেন । সাথিদের তাঁর কবিতা পড়তে অনুরােধ করে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভারতবর্ষের এক মস্ত বড়াে সম্পদ ।

তবে, উমাতারা স্কুলের ছাত্ররা সেদিন অঙ্কের শিক্ষক সূর্যকুমার সেনকে একটু অন্য নজরে দেখলেও, বুঝতেই পারেনি এই মানুষটি একদিন শক্তিশালী ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়বেন । তিন দিনের জন্য হলেও চট্টগ্রামকে বিদেশি শাসন মুক্ত করবেন ।

Read Also:

মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মায়াতরু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ফণীমনসা ও বনের পরি – নাটক | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বোকা কুমিরের কথা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মিষ্টি – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

তালনবমী – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

একলা – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

আকাশের দুই বন্ধু – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মাস্টারদা গল্পের লেখক পরিচিতি:

অশোককুমার মুখোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৫৫): প্রধানত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে লেখালেখি করেন । বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নানা বিষয়ে ছোটোদের জন্য ছড়া আর গল্প লিখেছেন । রবীন্দ্রনাথের ছবি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের রচয়িতা । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই – ‘টেগার্টের আন্দামান ডায়েরি’ এবং বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবনী নির্ভর উপন্যাস ‘অগ্নিপুরুষ’ । পাঠ্যাংশটি তাঁর ‘সূর্য সেন’ বইটি অবলম্বনে লিখিত ।

Follow us:

If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.

Leave a Reply