মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মধু আনতে বাঘের মুখে - গল্প

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “পাতাবাহার” । এখানে লেখক শিবশঙ্কর মিত্রের ‘মধু আনতে বাঘের মুখে’ গল্পটি দেওয়া হল ।

মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প

বনে যাওয়ার কথায় আর্জান এক পা । পেটপুরে নাস্তা খেয়ে বনে মধু কাটার জন্য তৈরি হলো । ধনাই, আর্জান ও কফিল । মধু কাটতে তিনজন লোক চাই । একজন চট মুড়ি দিয়ে গাছে উঠে কাস্তে দিয়ে চাক কাটে । আর একজন লম্বা কাঁচা বাঁশের মাথায় মশাল জ্বেলে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়ায় । আর তৃতীয় জন একটা বড়ো ধামা হাতে চাকের নীচে দাঁড়ায় – যাতে চাক কাটা শুরু হলে সেগুলি মাটিতে না-পড়ে ধামার মধ্যেই পড়ে । যে-সে কিন্তু মৌচাক কাটতে পারে না । লোকে বলে, মন্ত্র জানা চাই । মন্ত্র দিয়ে মৌমাছিকে ভুল পথে চালিত করতে হয় । তা না হলে, একবার শত্রুর খোঁজ পেলে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি ছেঁকে ধরে তাকে কামড়ে শেষ করে দেবে । ধনাই মন্ত্র জানে । সে নিজে তা-ই বলে, কিন্তু লোকে তা বিশ্বাস করে না । তারা ভাবে ধনাই-মামু গোঁয়ার, তাই গোঁয়ার্তুমি করেই মধু কাটে । দলের সঙ্গে একটা কলসও থাকে । এক একটা চাক কাটা হলে, মধু ঝেড়ে ঝেড়ে তাতে বোঝাই করা হয় ।

মধুর চাক খুঁজতে খুঁজতে গভীর বনে কোথায় গিয়ে হাজির হতে হবে, তার কোনো ঠিকানা নেই ।

শীতের শেষে সুন্দরবনে নানা গাছে ফুল ধরেছে । গরান গাছের ছোটো ছোটো ফুল । হলদে রং ।

সকাল থেকে ফুলের গন্ধে, হলুদ রঙে আর মৌমাছির গুঞ্জনে বন মেতে উঠেছে । ঝিরঝিরে বসন্তের হাওয়ায় ওদের তিনজনের মনে স্ফূর্তি আর ধরে না ।

Read Also:

মধু আনতে বাঘের মুখে – প্রশ্ন ও উত্তর | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ডিঙি করে অনেক দূর বনের ভিতর গিয়ে তিনজনে ডাঙায় উঠেছে । মনের আনন্দে একটার পর একটা মধুর চাক কেটে চলেছে । মধুতে কলস প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে । মধুর চাক পেলে অবশ্য তিন জনের কাজ ভাগ করাই আছে । কিন্তু তার আগে সবাইকে চাক খুঁজে বেড়াতে হয় । চাক খুঁজবার পন্থা হলো, মৌমাছি ফুল থেকে মধু নিয়ে কোনদিকে ছুটে চলেছে, তা লক্ষ করা এবং তার পিছু পিছু সেদিকে যাওয়া । এইভাবে খুঁজতে গিয়ে তিনজনের প্রায়ই একত্রে থাকা সম্ভব হয় না । এদিক-ওদিক ছিটকে পড়তেই হয় ।

তখন তিনজনে এগিয়ে চলেছে প্রায় এক লাইনে । ধনাই সবার আগে । বাঁ-হাতে কাস্তে আর চট । মাথায় মধুর কলসটা । আর ডান হাতে একটি মোটা লাঠি । সারা বনে শূলো । শূলো ডিঙিয়ে তার ফাঁকে ফাঁকে পা ফেলতে গিয়ে হোঁচট খাবার সম্ভাবনা । হয়তো তাতে কলসটা পড়ে যেতে পারে । তাই হোঁচট সামলাবার জন্য ধনাই একখানা লাঠি নিয়েছে ।

সামনে একটা ‘ট্যাক্’ । দুটো ছোটো নদী মিশবার ফলে একটা ত্রিভুজ খন্ড তৈরি হয়েছে । এই ধরনের ত্রিভুজ আকারের জমির মাথা ‘ট্যাক্’ বলেই পরিচিত ।

Read Also:

গল্পবুড়ো – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বুনো হাঁস – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

দারোগাবাবু এবং হাবু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

এতোয়া মুণ্ডার কাহিনি – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

পাখির কাছে ফুলের কাছে – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বিমলার অভিমান – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ছেলেবেলা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ট্যাকের দিকে সামনেই একটা গরান গাছ; তার ওপাশে হেঁদো বনের ঝোপ । গরান গাছে মধুর চাক দেখে ধনাই ওদের দিকে চিৎকার করে বলল, – আরে ! আর একটা চাক পেয়েছি । বলেই একবার সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পরমুহূর্তে বলল, – না-রে ! এতে মধু নেই ।

ট্যাকের মাথার দিকে আর না এগিয়ে ধনাই বাঁ হাতে সোজা পথ ধরল । এর মাঝে কফিল ও আর্জান এসে পড়েছে । আর্জান বিশ্বাস করতে চায় না । বলল, ধনাই-মামু বললে কী হবে ! মধু হলেও হতে পারে । – বলেই আর্জান এক থাবা কাদা তুলে গোল করে পাকিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারল চাক লক্ষ করে ।

মাটির তাল চাকের কোণে লেগে ঝপ্ করে পড়ল হেঁদো বনের ঝোপে । মধু পড়ল না । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটা মৌমাছি ওদের দিকে তাড়া করল । ওরা পিছনে ছুটে একটা ঝোপের আড়ালে পালাল ।

এদিকে ধনাই খানিকটা এগিয়ে এসেছে । তার সামনে তিন-চার হাত চওড়া একটা ‘শিষে’ – ছোটো সরু খাদ । কলস মাথায় নিয়ে কী করে লাফ দিয়ে এ শিষে পার হবে, তাই তার সমস্যা । এবার সামনের বাঁশের মতো সরু তবলা গাছটা ধরে শিষে পার হবার জন্য তৈরি হয়েছে । পার হয়েই সে কফিল ও আর্জানকে ডেকে বলবে, এমনি করেই পার হবার জন্য । কিন্তু ওদের সাড়া পাচ্ছে না কেন ? ভেবেই সে একবার পিছনে তাকাবার চেষ্টা করল ।

Read Also:

মাঠ মানে ছুট – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ঝড় – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মায়াতরু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

ফণীমনসা ও বনের পরি – নাটক | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

কিন্তু তাকাবার অবকাশ ধনাই পেল না । বিকট হুঙ্কারে বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর । সে হুঙ্কারে বন কেঁপে উঠল থরথর করে । আর্জান ও কফিল ঝােপের আড়ালে হতভম্ব । তাদের কথা বলার শক্তি নেই । নড়বারও কোনাে শক্তি রইল না – পালাবারও না এগুবারও না ।

এদিকে ধনাইকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিলেও বাঘ গিয়ে পড়ল সেই তবলা গাছের উপর – যে গাছটা ধরে ধনাই শিষে পার হতে চেয়েছিল । ধনাইকে ডিঙিয়ে বাঘের মাথা ওই গাছটাতে ঠোক্কর খেল দুর্দান্ত বেগে । মাথায় আঘাত খেয়ে বাঘ উলটে গিয়ে ধপাস করে পড়ল ‘শিষের’ ভিতর ।

তবলা গাছটা বাঘের থাবা থেকে ধনাইকে বাঁচাল বটে, কিন্তু তাকে বাঘের লেজের বাড়ি খেতে হল সপাং করে । লেজের বাড়িতে তার মাথার মধুর কলস পড়ে গেল । বাঘও পড়ল ‘শিষের’ গর্তের ভিতর । কলসও ভেঙে পড়ল তার মাথার উপর । বাঘের সারা মুখে নাকে চোখে ছিটকে পড়ল মধু ।… আর মুখে মধু পড়তেই বাঘ চোখমুখ কুঁচকে বেজায় ফ্যোঁৎ ফ্যোঁৎ করতে লাগল ।

Read Also:

বোকা কুমিরের কথা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মাস্টারদা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মিষ্টি – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

তালনবমী – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

একলা – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

আকাশের দুই বন্ধু – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার

মধু আনতে বাঘের মুখে গল্পের লেখক পরিচিতি:

শিবশঙ্কর মিত্র (১৯০৯-১৯৯২): বাংলাদেশের খুলনা জেলার বেলফুলি গ্রামে জন্ম । বহু বই লিখেছেন । তার লেখার বিশেষ প্রিয় বিষয় ‘সুন্দরবন’ । তিনি সেখানে গিয়ে বহু সময়ও কাটিয়েছেন । তাঁর ‘সুন্দরবন’ বইটির জন্য ভারতসরকার ১৯৬২ সালে তাঁকে শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্যের পুরস্কার দেন । ‘সুন্দরবন’ নিয়ে লেখা তার অন্যান্য বই-‘সুন্দরবনের আর্জান সর্দার’, ‘বনবিবি’, ‘বিচিত্র এই সুন্দরবন’, ‘রয়েল বেঙ্গলের আত্মকথা’ ইত্যাদি । পাঠ্যাংশটি তাঁর ‘সুন্দরবন সমগ্র’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে ।

Follow us:

If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.

Leave a Reply