পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “পাতাবাহার” । এখানে লেখিকা লীলা মজুমদারের ‘বুনো হাঁস’ গল্পটি দেওয়া হল ।
বুনো হাঁস – গল্প
এখন যদি আকাশের দিকে চেয়ে দ্যাখো, দেখতে পাবে দলে দলে বুনো হাঁস, তিরের ফলার আকারে, কেবলই উত্তর দিকে উড়ে চলেছে । কেউ এত উঁচুতে উড়ছে যে কোনো শব্দ নেই; কারো শুধু ডানার শোঁ শোঁ শোনা যাচ্ছে; আবার কেউ বা বলছে গাঁক গাঁক গাঁক । ওরা গরম দেশে শীত কাটিয়ে এখন শীতের শেষে আবার নিজেদের দেশে ফিরে যাচ্ছে । ওদের বেশি গরমও সয় না, আবার বেশি শীতও সয় না ।
কেউ কেউ হিমালয়ের উওর দিক থেকে, বরফের পাহাড় পেরিয়ে আসে । অনেকে নাকি ভারতের মাটি পার হয়ে, সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়ে ছোটো ছোটো দ্বীপে গিয়ে নামে । সেখানে মানুষের বাস নেই । নিরাপদে তাদের শীত কাটে । পৃথিবীর দক্ষিণের আধখানায় আমাদের শীতের সময় গরম, আবার আমাদের গরমের সময় শীত ।
Read Also:
বুনো হাঁস – প্রশ্ন ও উত্তর | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
লাডাকের একটা বরফে ঢাকা নির্জন জায়গাতে আমাদের জোয়ানদের একটা ঘাঁটি ছিল ।
তখন শীতের শুরু । মাথার ওপর দিয়ে দলে দলে বুনো হাঁস দক্ষিণ দিকে উড়ে যেত । বাড়ির জন্য ওদের মন কেমন করত; চিঠিপএ বিশেষ পৌঁছোত না, শুধু রেডিয়োতে যেটুকু খবর পেত ।
একদিন একটা বুনো হাঁস দল ছেড়ে নীচে নেমে পড়ল । একটা ঝোপের ওপর নেমে থরথর করে কাঁপতে লাগল । তারপর ওরা অবাক হয়ে দেখল আরেকটা বুনো হাঁসও নেমে এসে, এটার চারদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে । বরফ পড়তে শুরু করতেই জোয়ানরা গিয়ে আগের হাঁসটাকে তাঁবুতে নিয়ে এল । অন্য হাঁসটা প্রথমে তেড়ে এসেছিল, তারপর ওদের সঙ্গে সঙ্গে নিজেই গিয়ে তাঁবুতে ঢুকল । ভিতরে ছেড়ে দিতেই দেখা গেল প্রথম হাঁসটার ডানা জখম হয়েছে । তাই বেচারি উড়তে পারছিল না । জোয়ানদের মুরগি রাখার খালি জায়গা ছিল । সেখানে বুনো হাঁসরা রইল । টিনের মাছ, তরকারি, ভুট্টা, ভাত, ফলের কুচি, এইসব খেত ।
Read Also:
গল্পবুড়ো – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
দারোগাবাবু এবং হাবু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
এতোয়া মুণ্ডার কাহিনি – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
পাখির কাছে ফুলের কাছে – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বিমলার অভিমান – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ছেলেবেলা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাঠ মানে ছুট – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ঝড় – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ওদের দেখাশোনা করা জোয়ানদের একটা আনন্দেরই কাজ হয়ে দাঁড়াল । পরের হাঁসটা ইচ্ছা করলেই উড়ে চলে যেতে পারত, কিন্তু সঙ্গীকে ছেড়ে গেল না । সারা শীতকাল দুজনে ওখানে থেকে গেল । আস্তে আস্তে হাঁসের ডানা সারল । তখন সে একটু একটু করে উড়তে চেষ্টা করত । তাঁবুর ছাদ অবধি উঠে, আবার ধুপ করে পড়ে যেত।
এমনি করে সারা শীত দেখতে দেখতে কেটে গেল । নীচের পাহাড়ের বরফ গলতে শুরু করল । আবার সবুজ ঝোপঝাপ দেখা গেল । ন্যাড়া গাছে পাতার আর ফুলের কুঁড়ি ধরল । তারপর পাখিরা আবার আসতে আরম্ভ করল, এবার দক্ষিণ থেকে উওরে । দেশে ফিরে ওরা বাসা বাঁধবে, বাচ্চা তুলবে ।
এদের হাঁসরা আজকাল তাঁবুর বাইরে চরত আর মাথার ওপর দিয়ে হাঁসের দল গেলেই চঞ্চল হয়ে উঠত । তারপর একদিন জোয়ানরা সকলের কাজ সেরে এসে দেখে হাঁস দুটি উড়ে চলে গেছে । জোয়ানদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এল ।
Read Also:
মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মায়াতরু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ফণীমনসা ও বনের পরি – নাটক | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বোকা কুমিরের কথা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাস্টারদা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মিষ্টি – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
তালনবমী – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
একলা – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
আকাশের দুই বন্ধু – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বুনো হাঁস গল্পের লেখিকা পরিচিতি:
লীলা মজুমদার (১৯০৮-২০০৭): জন্ম কলকাতায়, জ্যাঠামশাই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়িতে । বাবা প্রমদারঞ্জন রায় ‘বনের খবর’ বইয়ের লেখক । শৈশব কেটেছে শিলং পাহাড়ে । ১৯২০ সাল থেকে কলকাতায় । সারাজীবন সাহিত্যচর্চাই তাঁর সঙ্গী ছিল । প্রথম ছোটোদের বই ‘বদ্যিনাথের বড়ি” । অন্যান্য বিখ্যাত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ – ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স’, ‘হলদে পাখির পালক’, ‘টং লিং’, ‘মাকু’ । ছোটোদের জন্য ‘সন্দেশ’ পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন বহুকাল । বহু পুরস্কারে সম্মানিত – যার মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘আনন্দ পুরস্কার’, ‘ভারতীয় শিশু সাহিত্যের পুরস্কার’ ।
তাঁর লেখা ‘গল্পসল্প’ বই থেকে ‘বুনো হাঁস’ গল্পটি নেওয়া হয়েছে ।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.