পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “পাতাবাহার” । এখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ কবিতাটি দেওয়া হল ।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – কবিতা
দিনের আলো নিবে এল,
সুয্যি ডোবে ডোবে ।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাঁদের লোভে লোভে ।
মেঘের উপর মেঘ করেছে,
রঙের উপর রং ।
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা
বাজল ঠঙ্ ঠঙ্ ।
ও পারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা ।
এ পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা !
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান –
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান ।”
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
কোথায় বা সীমানা ।
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়,
কেউ করে না মানা ।
কত নতুন ফুলের বনে
বিষ্টি দিয়ে যায় ।
পলে পলে নতুন খেলা
কোথায় ভেবে পায় ।
মেঘের খেলা দেখে কত
খেলা পড়ে মনে-
কত দিনের লুকোচুরি
কত ঘরের কোণে ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান –
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান ।”
Read Also:
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর – প্রশ্ন ও উত্তর | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মনে পড়ে, ঘরটি আলো
মায়ের হাসিমুখ,
মনে পড়ে, মেঘের ডাকে
গুরু গুরু বুক ।
বিছানাটির একটি পাশে
ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের ‘পরে দৌরাত্মি সে
না যায় লেখাজোকা ।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে
করে দাপাদাপি ।
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে,
সৃষ্টি ওঠে কাঁপি ।
মনে পড়ে মায়ের মুখে
শুনেছিলেম গান –
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান ।”
মনে পড়ে সুয়োরানি
দুয়োরানির কথা,
মনে পড়ে অভিমানী
কঙ্কাবতীর ব্যথা ।
মনে পড়ে ঘরের কোণে
মিটি মিটি আলো,
চারি দিকে দেয়ালেতে
ছায়া কালো কালো ।
বাইরে কেবল জলের শব্দ
ঝুপ্ ঝুপ্ ঝুপ্ –
দস্যি ছেলে গল্প শোনে
একেবারে চুপ ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
মেঘলা দিনের গান –
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান ।”
কবে বিষ্টি পড়েছিল,
বান এল সে কোথা ।
শিবঠাকুরের বিয়ে হল
কবেকার সে কথা ।
সেদিনও কি এমনিতরো
মেঘের ঘটাখানা ।
থেকে থেকে বিজুলি কি
দিতেছিল হানা ।
তিন কন্যে বিয়ে ক’রে
কী হল তার শেষে ।
না জানি কোন নদীর ধারে,
না জানি কোন দেশে,
কোন ছেলেরে ঘুম পাড়াতে
কে গাহিল গান –
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান ।”
Read Also:
গল্পবুড়ো – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বুনো হাঁস – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
দারোগাবাবু এবং হাবু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
এতোয়া মুণ্ডার কাহিনি – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
পাখির কাছে ফুলের কাছে – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বিমলার অভিমান – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ছেলেবেলা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাঠ মানে ছুট – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ঝড় – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর কবিতার কবি পরিচিতি:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১): জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে । ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘ভারতী’ ও ‘বালক’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন । ‘কথাকাহিনী’, ‘সহজপাঠ’, ‘রাজর্ষি’, ‘ছেলেবেলা’, ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘হাস্যকৌতুক’, ‘ডাকঘর’ শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করে । দীর্ঘ জীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন । ১৯১৩ সালে ‘Song Offerings’-এর জন্য এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান । দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তাঁর রচনা ।
‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ কবিতাটি প্রথমে ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ শিরোনামে ১৩১০ বঙ্গাব্দে মোহিতচন্দ্র সেন সম্পাদিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । পরবর্তীকালে কৰি স্বয়ং ছোটোদের জন্য ‘ছুটির পড়া’ শীর্ষক একটি সংকলন গ্রন্থে ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ নামে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করেন । এই সংকলন গ্রন্থটি ১৩১৬ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থে গৃহীত কবিতাটির সঙ্গে ‘ছুটির পড়া’য় অন্তর্ভুক্ত কবিতাটির কিছু উল্লেখযোগ্য পাঠভেদ রয়েছে । ‘ছুটির পড়া’ সংকলনটি প্রকাশ করার সময় কবি নিজেই কবিতাটির এই সমস্ত পরিমার্জন ঘটিয়েছিলেন । তাই, পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রকৃত ‘ছুটির পড়া’র পাঠটিকেই গ্রহণ করা হয়েছে ।
Read Also:
মধু আনতে বাঘের মুখে – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মায়াতরু – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
ফণীমনসা ও বনের পরি – নাটক | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বোকা কুমিরের কথা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মাস্টারদা – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
মিষ্টি – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
তালনবমী – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
একলা – কবিতা | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
আকাশের দুই বন্ধু – গল্প | পঞ্চম শ্রেণি | পাতাবাহার
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর কবিতার সারমর্ম:
‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটির পড়া’ পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
দিনের আলো কমে গেছে, সূর্য ডুবতে চলেছে । চাঁদের লোভে আকাশে নানা রঙের মেঘ জমেছে । মন্দিরেতে ঠঙ্ ঠঙ্ করে কাঁসর ঘণ্টা বাজছে । ওপারেতে বৃষ্টি এসে গাছপালা ঝাপসা হয়ে গেছে এবং এপারে মেঘের মাথায় একশো মানিক জ্বলছে । এই সব কিছুর মধ্যে কবির ছেলেবেলায় শোনা ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান’ গানটি মনে পড়ে যাচ্ছে ।
আকাশ জুড়ে মেঘেরা দেশে দেশে ঘুরে খেলে বেড়ায়, কেউ তাদের মানা করে না । কত নতুন ফুলের বনে তারা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে । কবি আশ্চর্য হয়ে যান যে তারা এত খেলা কোথা থেকে ভেবে পায় । মেঘেদের দেখে তাঁরও মনে পড়ে যাচ্ছে ছেলেবেলায় ঘরের কোণে লুকোচুরি খেলা । আর তার সাথে কবির মনে পড়ছে ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান’ গানটি ।
তাঁর ঘর আলো করা মায়ের হাসিমুখ, মেঘের ডাকে বুক গুরুগুরু করার কথা মনে পড়ছে । ছেলেবেলায় তিনি তার বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে থাকতেন, দুরন্ত ছিলেন তিনি ছেলেবেলায় , সারা ঘর দাপাদাপি করে বেড়াতেন । বাইরে মেঘ ডেকে উঠত, তাতে সারা সৃষ্টি অর্থাৎ পৃথিবী যেন কেঁপে উঠত । তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছিল তিনি তাঁর মায়ের মুখে শুনেছিলেন সেই গান, বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান ।
সুয়োরানি দুয়োরানির কথা, অভিমানী কঙ্কাবতীর কথা তাঁর মনে পড়ছে । তাঁর মনে পড়ছে ঘরের কোণে মিটি মিটি আলো, চারি দিকের দেয়ালের কালো কালো ছায়া । দস্যি ছেলের চুপ করে গল্প শোনার কথা মনে পড়ে । কবির তারই সঙ্গে মনে পড়ছে মেঘলা দিনের গান ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান ।’
সে কবেকার কথা যখন শিবঠাকুরের বিয়ে হয়েছিল, সেদিনও কি এমনই মেঘের ঘটা ছিল । সেদিনও কি বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল । যে তিনকন্যার বিয়ে হল শেষে তাদেরই বা কী হল । কোন নদীর ধারে, কোন দেশে, কোন ছেলেকে ঘুম পাড়াতে কে যেন গান গেয়ে উঠল ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান’।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.