নবম শ্রেণীর ভূগোল, দ্বিতীয় অধ্যায় – পৃথিবীর গতিসমূহ থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক ও দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হল ।
পৃথিবীর গতিসমূহ : বহুবিকল্পভিত্তিক ও অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন
(ক) সঠিক উত্তরটি শনাক্ত করো ।
১. কোপারনিকাস/ অ্যারিস্টটল/ আইনস্টাইন/ ফেরেল প্রমাণ করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে ।
উত্তর: কোপারনিকাস ।
২. নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ১৬৩০/ ১৬০০/ ১৬৫০/ ১৬৮০ কিমি প্রতি ঘন্টায় ।
উত্তর: ১৬৩০ কিমি প্রতি ঘন্টায় ।
৩. পৃথিবীর কক্ষ গোলাকার/ উপবৃত্তাকার/ আয়তাকার/ ত্রিভূজাকার ।
উত্তর: উপবৃত্তাকার ।
৪. ২১শে/ ২৩শে/ ২৫শে/ ২৬শে সেপ্টেম্বর জলবিষুব ।
উত্তর: ২৩শে সেপ্টেম্বর ।
৫. পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব সর্বাধিক হয় ২১শে জুন/ ৪ঠা জুলাই/ ৩রা জানুয়ারি/ ২৩শে সেপ্টেম্বর ।
উত্তর: ৪ঠা জুলাই ।
৬. পৃথিবীর সর্বাধিক গতিবেগ অনুভূত হয় নিরক্ষরেখায়/ মেরুতে/ অক্ষরেখায়/ মকরক্রান্তি রেখায় ।
উত্তর: নিরক্ষরেখায় ।
৭. পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের সঙ্গে ২৩১/২°/ ৬৬১/২° / ৪৫°/ ৬০° কোণে হেলানো থাকে ।
উত্তর: ৬৬১/২° ।
৮. নরওয়ে/ সুইডেন/ গ্রীস /হল্যান্ডকে ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’ বলে ।
উত্তর: নরওয়ে ।
৯. ২৩শে সেপ্টেম্বর/ ২৩শে মার্চ/ ২৬শে সেপ্টেম্বর/ ২১শে মার্চ মহাবিষুব সংগঠিত হয় ।
উত্তর: ২১শে মার্চ ।
১০. ২০০৪/ ২০০৬/ ২০০৭/ ২০১০ অধিবর্ষ ।
উত্তর: ২০০৪ ।
১১. সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে ২২শে জুলাই/ ২৩শে সেপ্টেম্বর/ ২১শে জুন/ ৪ঠা জুলাই ।
উত্তর: ২১শে জুন ।
১২. সূর্যকিরণ মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে ২১শে ডিসেম্বর/ ২২শে ডিসেম্বর/ ২৩শে ডিসেম্বর/ ২৬শে ডিসেম্বর।
উত্তর: ২২শে ডিসেম্বর ।
(খ) ঠিক অথবা ভুল নির্ণয় করো ।
১. পৃথিবীর একটি মাত্র গতি আছে ।
উত্তর: ভুল ।
২. আইজ্যাক নিউটন আবিষ্কার করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে ।
উত্তর: ভুল ।
৩. মেরুবিন্দুতে পৃথিবীর গতিবেগ সর্বাধিক ।
উত্তর: ভুল ।
৪. পৃথিবী পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘোরে ।
উত্তর: ভুল ।
৫. পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য ভূপৃষ্ঠে দিনরাত্রি হয় ।
উত্তর: ঠিক ।
৬. পৃথিবীর কোনো স্থানে যখন সন্ধ্যা হয় তখন তার বিপরীত স্থানে প্রভাত হয় ।
উত্তর: ঠিক ।
৭. অনুসূর অবস্থানে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি ।
উত্তর: ভুল ।
৮. ২১শে জুন পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব সর্বাধিক ।
উত্তর: ভুল ।
৯. নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ১৬৩০ কিমি ।
উত্তর: ঠিক ।
১০. পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি ।
উত্তর: ঠিক ।
১১. ২১শে মার্চ পৃথিবীব্যাপি বসন্তকাল ।
উত্তর: ভুল ।
১২. ১৮৭৪ সালটি ছিল অধিবর্ষ ।
উত্তর: ভুল ।
(গ) শূন্যস্থান পূর্ণ করো ।
১. পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুকে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যুক্ত করা হয় তাকে পৃথিবীর _____ বলে ।
উত্তর: অক্ষ ।
২. আবর্তন গতির অপর নাম _____ গতি ।
উত্তর: আহ্নিক ।
৩. যে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ ধরে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিন করে সেই পথটিকে বলে পৃথিবীর _____ ।
উত্তর: কক্ষ ।
৪. _____-এর সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে যায় ।
উত্তর: ফেরেল ।
৫. পৃথিবীর কক্ষপথের পরিধি প্রায় _____ কোটি কিমি ।
উত্তর: ৯৬।
পৃথিবীর গতিসমূহ : সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন
১. পৃথিবীর আবর্তন গতি কাকে বলে ?
উত্তর: সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে অবিরাম ঘুরে চলেছে । নিজের অক্ষকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই ধরনের গতিকে বলে আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতি । নিজের অক্ষের চারদিকে এইভাবে একবার সম্পূর্ণ পাক খেতে বা আবর্তিত হতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অর্থাৎ প্রায় ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন।
২. পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি কাকে বলে ?
উত্তর: পৃথিবী নিজের মেরুদন্ডের চারদিকে আবর্তন করতে করতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ ধরে অনবরত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে । পৃথিবীর এই ধরনের সূর্যকেন্দ্রিক গতিকে বলে পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি । সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ।
৩. সৌরদিন ও নক্ষত্রদিন কাকে বলে ?
উত্তর: নিজের মেরুরেখার চারদিকে পৃথিবীর একবার সম্পূর্ণ আবর্তন করতে সময় লাগে সূর্যের হিসেবে ২৪ ঘন্টা, কিন্তু নক্ষত্রের হিসেবে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড । এজন্য ২৪ ঘন্টাতে একটি সৌরদিন এবং এর থেকে ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড কম সময়ে একটি নক্ষত্রদিন ধরা হয় ।
৪. ছায়াবৃত্ত কাকে বলে ?
উত্তর: আবর্তনের সময় পৃথিবীর যে অর্ধাংশ সূর্যের দিকে আসে, সেখানে হয় দিন এবং বিপরীত দিকের অর্ধাংশে হয় রাত্রি । ভূপৃষ্ঠের এই আলোকিত অর্ধাংশ ও অন্ধকার অর্ধাংশের বৃত্তাকার সীমারেখাকে বলে ছায়াবৃত্ত ।
৫. দিন ও রাত্রির বিভিন্ন অবস্থা কী কী ?
উত্তর: দিন ও রাত্রির বিভিন্ন অবস্থা : (১)উষা ও গোধূলি, (২)প্রভাত ও সন্ধ্যা, (৩)মধ্যাহ্ন ও মধ্যরাত্রি ।
৬. উষা ও গোধূলি কাকে বলে ?
উত্তর: উষা: প্রভাতে সূর্যোদয়ের কিছু আগে যে সময়টিতে ক্ষীণ আলো পাওয়া যায়, সেই সময়টিকে বলে উষা ।
গোধূলি: সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর যে সময়টিতে ক্ষীণ আলো পাওয়া যায়, সেই সময়টিকে বলে গোধূলি ।
৭. পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ ও কক্ষতল কাকে বলে ?
উত্তর: কক্ষ বা কক্ষপথ : যে নির্দিষ্ট পথ ধরে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সেই পথটিকে বলে পৃথিবীর কক্ষ বা কক্ষপথ । এই কক্ষপথের আকৃতি উপবৃত্তাকার এবং পরিধি প্রায় ৯৬ কোটি কিমি ।
কক্ষতল: পৃথিবীর কক্ষপথটি যে সমতলে আছে, তাকে বলে পৃথিবীর কক্ষতল । পৃথিবীর কেন্দ্র এবং সূর্যের কেন্দ্র একই কক্ষতলে অবস্থিত ।
৮. ফেরেলের সূত্র কাকে বলে ?
উত্তর: নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমে যায়। আবর্তনের বেগের এই পার্থক্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি গতিশীল পদার্থই উত্তর থেকে দক্ষিণে বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হওয়ার সময় সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না । প্রবাহপথ বেঁকে যায় বা গতিবিক্ষেপ ঘটে । এই গতিবিক্ষেপ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে হয় । বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে যায় ।
আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই সূত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে গতিশীল পদার্থের গতিবিক্ষেপ-সংক্রান্ত এই নিয়মটিকে ফেরেলের সূত্র বলে ।
৯. পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর অবস্থান কাকে বলে ?
উত্তর: অপসূর অবস্থান: পৃথিবীর কক্ষের আকৃতি উপবৃত্তাকার । সূর্য এই উপবৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে নয়, একটি নাভি বা ফোকাস-এ অবস্থিত । এজন্য পরিক্রমণের সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সারা বছর সমান থাকে না, কখনও একটু বাড়ে, কখনও একটু কমে । সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার । এর মধ্যে ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে, প্রায় ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি । কক্ষপথে পৃথিবীর এই দূরতম অবস্থানের নাম অপসূর অবস্থান ।
অনুসূর অবস্থান: অন্যদিকে, ৩রা জানুয়ারী সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম থাকে, প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি । কক্ষপথে পৃথিবীর নিকটতম অবস্থানের নাম অনুসূর অবস্থান । সূর্য থেকে বেশি দূরত্বের জন্য অপসূর পর্যায়ে পৃথিবীর পরিক্রমণের গতিবেগ কিছুটা কমে যায়, কিন্তু কম দূরত্বের জন্য অনুসূর পর্যায়ে গতিবেগ একটু বৃদ্ধি পায় ।
১০. পরিক্রমণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখা কীভাবে থাকে ?
উত্তর: পরিক্রমণকালে পৃথিবীর মেরুরেখা সর্বদাই ধ্রুবতারামুখী হয়ে নিজের কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬১/২° কোণে হেলে থাকে এবং কক্ষপথের বিভিন্ন অবস্থানে পৃথিবীর মেরুরেখা সর্বদা সমান্তরাল থাকে । পরিক্রমণকালে পৃথিবীর মেরুরেখা ৬৬১/২° কোণে হেলে থাকে বলে বছরে ৬ মাস পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এবং বাকি ৬ মাস দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে ।
১১. পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ কী ?
উত্তর: যেসব কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়, সেগুলি হল – (১)পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি, (২)কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬১/২° কোণ করে পৃথিবীর মেরুরেখার অবস্থান, (৩)পৃথিবীর আবর্তন গতি, (৪)পৃথিবীর গোলীয় আকৃতি, এবং (৫)পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ ।
১২. সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা কী ? অথবা, মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা কী ?
উত্তর: মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা: মেরু অঞ্চলে যখন একটানা ৬ মাস রাত্রি থাকে (উত্তর মেরুতে ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে মার্চ এবং দক্ষিণ মেরুতে ২১শে মার্চ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর), তখন ওখানকার রাতের আকাশে মাঝে মাঝে রামধনুর মতো এক অপূর্ব সুন্দর আলোর জ্যোতি দেখা যায় । একেই বলে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা ।
সুমেরু প্রভা: উত্তর মেরুতে মেরুজ্যোতিকে বলে সুমেরু প্রভা ।
কুমেরু প্রভা: দক্ষিণ মেরুতে মেরুজ্যোতিকে বলে কুমেরু প্রভা ।
১৩. ঋতু এবং ঋতু পরিবর্তন কাকে বলে ?
উত্তর: সূর্য পৃথিবীর আলো ও তাপের উৎস । সূর্যরশ্মিতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় । কিন্তু পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি, কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর মেরুরেখার ৬৬১/২° কোণে অবস্থিতি প্রভৃতি কারণে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সূর্যরশ্মি সারা বছর সমানভাবে পড়ে না । ফলে কোনো জায়গায় কখনও হয় শীত, আবার কখনও হয় গরম । শীত ও গরমের এই পার্থক্য অনুসারে বছরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেকটি ভাগকে বলে ঋতু । আর এই শীত ও গরমের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের নাম ঋতু পরিবর্তন ।
১৪. নিশীথ সূর্য এবং নিশীথ সূর্যের দেশ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: নিশীথ সূর্য: প্রধানত পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি এবং মেরুরেখার হেলানো (৬৬১/২° কোণে) অবস্থানের জন্য ২১শে মার্চ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৬ মাস সুমেরুতে (৯০° উঃ অক্ষাংশ) এবং তার আশেপাশে একটানা দিন থাকে । এই সময় নরওয়ের উত্তর সীমান্তের হ্যামারফেস্ট বন্দর (৭০° উঃ অক্ষাংশ) থেকে গভীর রাতেও দূরে উত্তর মেরুর আকাশে সূর্য দেখা যায় । একে বলে নিশীথ সূর্য ।
নিশীথ সূর্যের দেশ: এজন্য নরওয়ের হ্যামারফেস্ট বন্দর এবং তার আশেপাশের জায়গাসমূহকে বলে নিশীথ সূর্যের দেশ ।
১৫. উত্তর অয়নান্ত দিবস কাকে বলে ? অথবা, কর্কটসংক্রান্তি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে ২৩১/২° উত্তর সমাক্ষরেখা বা কর্কটক্রান্তি রেখাই সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ সীমা । ২১শে জুনে তারিখে সূর্যের এই উত্তরমুখী গমন বা উত্তরায়ণ শেষ হয় বলে এই দিনটিকে বলা হয় উত্তর অয়নান্ত দিবস বা কর্কটক্রান্তি ।
১৬. মকরক্রান্তি বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে ২৩১/২° দক্ষিণ সমাক্ষরেখা বা মকরক্রান্তি রেখা সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ সীমা। ২২শে ডিসেম্বর সূর্যের দক্ষিণমুখী গমন বা দক্ষিনায়ন শেষ হয় বলে এই দিনটিকে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস ।
১৭. মহাবিষুব ও জলবিষুব বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: যে তারিখে পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয়, সেই দিনটিকে বলে বিষুব । ২১শে মার্চ এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর – এই দুটি তারিখে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে চলতে চলতে এমন জায়গায় আসে যে, মধ্যাহ্ন সূর্যকিরণ নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয় ।
২১শে মার্চ দিনটিকে বলে মহাবিষুব এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর দিনটিকে বলে জলবিষুব । ২১শে মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে বলে এই দিনটিকে (২১শে মার্চ) Vernal or Spring Equinox বা মহাবিষুব বলা হয় । আর ২৩শে সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎ ঋতু বিরাজ করে বলে এই দিনটিকে (২৩শে সেপ্টেম্বর) Autumnal Equinox বা জলবিষুব বলে ।
১৮. পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমণ বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন ও পরিক্রমণ বলতে পৃথিবীর ২টি গতিকে বোঝায় – (১)আবর্তন গতি এবং (২)পরিক্রমণ গতি ।
আবর্তন গতি: উৎপত্তির পর থেকেই পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে অবিরাম আবর্তন করে চলেছে । নিজের অক্ষকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই ধরনের গতিকে বলে আবর্তন গতি । নিজের অক্ষের চারদিকে একবার সম্পূর্ণ আবর্তিত হতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন ।
পরিক্রমণ গতি: পৃথিবী নিজের অক্ষের চারদিকে আবর্তন করতে করতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ অনুসরণ করে সূর্যকে পরিক্রমণ করে । সূর্যকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই ধরনের গতিকে বলে পরিক্রমণ গতি । সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা ১ বছর।
১৯. পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল কী ?
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ভূপৃষ্ঠে (১) দিন ও রাত্রি হয়, (২) সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়, (৩) সময় নির্ধারণ করা যায়, (৪) বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ ঘটে, এবং (৫) জোয়ারভাটা হয় ।
২০. পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল কী কী ? অথবা পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর: পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে – (১) বছর বা সময়কাল নির্ধারণ করা যায়, (২) দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি হয় এবং (৩) ঋতু পরিবর্তন হয় ।
(১) বছর বা সময়কাল নির্ধারক: সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর যে সময় লাগে অর্থাৎ ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড, এই সময়কালকে এক সৌরবছর ধরা হয় ।
(২) দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে বছরের বিভিন্ন সময়ে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি হয় অর্থাৎ কখনও দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো, আবার কখনও দিন ছোটো ও রাত্রি বড়ো হয় ।
(৩) ঋতু পরিবর্তন: পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে ভূপৃষ্ঠে গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত – এই চারটি ঋতু পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় ।
২১. পৃথিবী কোন দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ?
উত্তর: পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে অবিরাম পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করতে করতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথ ধরে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.