পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBSE) অনুমোদিত ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “সাহিত্যমেলা” । এখানে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘ভরদুপুরে’ কবিতাটির প্রশ্ন ও উত্তর (হাতে কলমে) আলোচনা করা হল ।
ভরদুপুরে – প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান কোথায় ?
উত্তর : নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা ।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে ।
উত্তর : তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম হল নীল নির্জন, অন্ধকার বারান্দা ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ ‘অশথ গাছ’-কে পথিক জনের ছাতা বলা হয়েছে কেন ?
উত্তর : কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় ‘অশথ গাছ’-কে পথিক জনের ছাতা বলা হয়েছে কারণ ছাতার মতাে অশ্বত্থ গাছটিও পথিকদের রােদবৃষ্টির থেকে আড়াল করে ।
২.২ রাখালরা গাছের তলায় শুয়ে কী দেখছে ?
উত্তর : কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় রাখালরা গাছের তলায় শুয়ে মাথার ওপরে মেঘেদের আকাশ ছুঁয়ে ভেসে বেড়ানো দেখছে অর্থাৎ নীল আকাশে মেঘেদের আনাগােনা দেখছে ।
২.৩ নদীর ধারের কোন দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে ?
উত্তর : কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় নদীর ধারে শুকনাে খড়ের আঁটি বােঝাই করা একটা বড়াে নৌকা বাঁধা থাকার দৃশ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে ।
৩. একই অর্থযুক্ত শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :
তৃণ, তটিনী, গােরক্ষক, পৃথিবী, জলধর ।
উত্তর :
তৃণ | ঘাস |
তটিনী | নদী |
গােরক্ষক | রাখাল |
পৃথিবী | বিশ্ব, ভুবন |
জলধর | মেঘ |
৪. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তিত করাে :
ঘাস, রাখাল, আকাশ, মাঠ, আদর, গাছ, লােক ।
উত্তর :
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
ঘাস | ঘেসাে |
রাখাল | রাখালিয়া |
আকাশ | আকাশি |
মাঠ | মেঠো |
আদর | আদুরে |
গাছ | গেছাে |
লােক | লৌকিক |
৫. পাশে দেওয়া শব্দগুলির সঙ্গে উপসর্গ যােগ করে নতুন শব্দ তৈরি করাে :
নদী, আদর, বাতাস ।
উত্তর :
শব্দ | উপসর্গ | নতুন শব্দ |
---|---|---|
নদী | উপ | উপনদী |
আদর | অনা | অনাদর |
বাতাস | সু | সুবাতাস |
৬. নীচের বাক্য বা বাক্যাংশগুলির থেকে উদ্দেশ্য ও বিধেয় চিহ্নিত করে উদ্দেশ্য অংশের সম্প্রসারণ করাে :
৬.১ ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে পথিকজনের ছাতা ।
উত্তর :
উদ্দেশ্য – ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে ।
বিধেয় – পথিকজনের ছাতা ।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ – নদীর ধারের ওই যে বহুদিনের পুরােনাে অশথ গাছটি, ও তাে ।
৬.২ কেউ কোথা নেই, বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে ।
উত্তর :
প্রথম বাক্যাংশ – কেউ কোথা নেই
উদ্দেশ্য – কেউ ।
বিধেয় – কোথা নেই ।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ – গ্রীষ্মের দুপুরে আমাকে রাস্তাটা চিনিয়ে দেওয়ার মতাে কেউ নেই ।
দ্বিতীয় বাক্যাংশ – বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে ।
উদ্দেশ্য – বাতাস ।
বিধেয় – ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে ।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ – ঝােড়াে বাতাস ।
৬.৩ আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমােচ্ছে এইখানে ।
উত্তর : উদ্দেশ্য – বিশ্বভুবন ।
বিধেয় – আঁচল পেতে এইখানে ঘুমােচ্ছে ।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ – ভরদুপুরে বিশ্বভুবন ।
৭. ‘বিশ্বভুবন’ শব্দে ‘বিশ্ব’ আর ‘ভুবন’ শব্দদুটির একত্র উপস্থিতি রয়েছে যাদের অর্থ একই । এমন পাঁচটি নতুন শব্দ তুমি তৈরি করাে ।
উত্তর :
নতুন শব্দ | প্রথম শব্দ | দ্বিতীয় শব্দ |
---|---|---|
কাজকর্ম | কাজ | কর্ম |
চালাকচতুর | চালাক | চতুর |
দীনদরিদ্র | দীন | দরিদ্র |
বলাকওয়া | বলা | কওয়া |
হাঁটাচলা | হাঁটা | চলা |
৮. ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করাে ( কোনটিতে কাজ চলছে/ কোনটিতে বােঝাচ্ছে কাজ শেষ হয়ে গেছে ) :
৮.১ চরছে দূরে গােরুবাছুর ।
উত্তর : চরছে – কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) ।
৮.২ দেখছে রাখাল মেঘগুলাে যায় আকাশটাকে ছুঁয়ে ।
উত্তর : যায় – কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) ।
৮.৩ নদীর ধারে বাঁধা কাদের ওই বড়াে নৌকাটি ।
উত্তর : বাঁধা – কাজ শেষ হয়ে গেছে (পুরাঘটিত বর্তমান) ।
৮.৪ বাতাস ওড়ায় মিহিন সাদা ধুলাে ।
উত্তর : ওড়ায় – কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) ।
৮.৫ আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমােচ্ছে এইখানে ।
উত্তর : ঘুমােচ্ছে – কাজ চলছে (ঘটমান বর্তমান) ।
৯. নীচের বাক্যগুলির গঠনগত শ্রেণিবিভাগ করাে ( সরল/ যৌগিক/ জটিল ) :
৯.১ তলায় ঘাসের গালচেখানি আদর করে পাতা ।
উত্তর : সরল বাক্য ।
৯.২ ওই যে অশথ গাছটি, ও তাে পথিকজনের ছাতা ।
উত্তর : জটিল বাক্য ।
৯.৩ ভরদুপুরে যে যার ঘরে ঘুমােচ্ছে লােকগুলাে ।
উত্তর : সরল বাক্য ।
৯.৪ যে জানে, সেই জানে ।
উত্তর : জটিল বাক্য ।
১০. ‘ওই যে অশথ গাছটি…’ অংশে ‘ওই’ একটি দূরত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম । এমন আরও কয়েকটি সর্বনামের উদাহরণ দাও । যেমন – ও, উহা, উনি, ওঁরা ইত্যাদি ।
উত্তর : উল্লিখিত সর্বনামগুলি ছাড়া আরও কয়েকটি সর্বনাম হল – ওইগুলো, ওটা, ওগুলাে, ওখানে, ওকে, ওদের, উহারা, ওরা ইত্যাদি ।
১১. ‘পথিকজনের ছাতা’ – সম্বন্ধপদটি চিহ্নিত করাে, কবিতায় থাকা সম্বন্ধপদ খুঁজে লেখাে আর নতুন সম্বন্ধপদ যুক্ত শব্দ তৈরি করে । যেমন – গােঠের রাখাল, দুপুরের ঘুম ।
উত্তর : ‘পথিকজনের ছাতা’ – এখানে সম্বন্ধপদটি হল ‘পথিকজনের ।
কবিতায় রয়েছে এমন সম্বন্ধপদ হল – ঘাসের, গাছের ।
এছাড়াও কয়েকটি নতুন সম্বন্ধপদ যুক্ত শব্দ হল – খেলার মাঠ, জলের মাছ, মুখের হাসি, সোনার আংটি ইত্যাদি ।
১২. ‘ওই বড়াে নৌকাটি’ বলতে বােঝায় একটি নৌকোকে । নৌকার সঙ্গে এখানে ‘টি’ নির্দেশক বসিয়ে একবচন বােঝানাে হয়েছে । এরকম একটিমাত্র একবচনের রূপ বােঝাতে কোন কোন নির্দেশক ব্যবহৃত হতে পারে, তা উদাহরণ দিয়ে লেখাে ।
উত্তর : একবচন বােঝাতে ‘টি’ ছাড়া টা, খানা, খানি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হতে পারে । নীচে কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে তা দেখানাে হল –
টা – কলমটা, চাদরটা, ছেলেটা, জামাটা, মেয়েটা, বইটা, বাড়িটা ইত্যাদি ।
খানা – খাঁচাখানা, গাড়িখানা, চৌকিখানা, তিনখানা ইত্যাদি ।
খানি – আসনখানি, একখানি, মুখখানি, নৌকাখানি, পথখানি ইত্যাদি ।
১৩. কবিতা থেকে বহুবচনের প্রয়ােগ রয়েছে এমন শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো । প্রসঙ্গত, শব্দকে আর কী কী ভাবে আমরা বহুবচনের রূপ দিতে পারি, তা উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর : বহুবচনের প্রয়ােগ রয়েছে কবিতা থেকে পাওয়া এমন শব্দগুলি হল – গােরুবাছুর, মেঘগুলাে, কাদের, লােকগুলাে ।
এছাড়া গুলি, দল, পুঞ্জ, বর্গ, বহু, বৃন্দ, মণ্ডলী, মালা, রা, রাজি, রাশি, সমূহ, শত, শ্রেণি ইত্যাদি নির্দেশক যােগ করে বহুবচনের রূপ দেওয়া সম্ভব । নীচে প্রতিটি নির্দেশক প্রয়ােগের মাধ্যমে শব্দ গঠন করে বহুবচনের রূপটি দেখানাে হল –
গুলি – গানগুলি
দল – গুল্মদল
পুঞ্জ – নক্ষত্রপুঞ্জ
বর্গ – ব্যক্তিবর্গ
বহু – বহুদিন
বৃন্দ – অধিবাসীবৃন্দ
মণ্ডলী – অতিথিমণ্ডলী
মালা – মেঘমালা
রা – ছেলেরা
রাজি – পুষ্পরাজি
রাশি – জলরাশি
সমূহ – গ্রন্থসমূহ
শত – শতবর্ষ
শ্রেণি – বৃক্ষশ্রেণি
১৪. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
১৪.১. ‘আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে’ – কবির এমন ভাবনার কারণ কী ?
উত্তর : ‘আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে’ – কবির এমন ভাবনার কারণ
ভরদুপুরে কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের ছবি এঁকেছেন । বড় অশ্বত্থ গাছটি পথিকদের জন্য ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তার নিচে নরম ঘাস বিছিয়ে রেখেছে, যেখানে ক্লান্ত পথিকরা বিশ্রাম নিতে পারে । দূরে গোরু-বাছুর ঘাস খাচ্ছে, আর গাছের নিচে এক রাখাল শুয়ে আকাশে মেঘের খেলা দেখছে । নদীর ধারে একটি বড়ো নৌকা খড় বোঝাই করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । চারপাশে কোনো শব্দ নেই, শুধু হালকা বাতাস ধুলো উড়িয়ে নিচ্ছে । গ্রামের মানুষজন ঘরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছে ।
এই নিস্তব্ধ ও শান্ত পরিবেশ দেখে কবির মনে হয়েছে, শুধু মানুষ নয়, পুরো প্রকৃতি যেন সবুজ আঁচল বিছিয়ে এখানে ঘুমিয়ে পড়েছে । তাই কবি বলেছেন, “আঁচল পেতে বিশ্বভুবন ঘুমোচ্ছে এইখানে ।”
১৪.২. ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের ছবি খুঁজে পাওয়া যায় । কবিতায় ফুটে ওঠা সেই ছবিটি কেমন লেখো ।
উত্তর : ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের ছবি
‘ভরদুপুরে’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার একটি অলস ও শান্ত দুপুরের সুন্দর ছবি এঁকেছেন ।
পথের ধারে একটি বড় অশ্বত্থ গাছ দাঁড়িয়ে আছে, যেটি পথিকদের জন্য ছাতা হয়ে ছায়া দিচ্ছে । গাছের নিচে নরম সবুজ ঘাস বিছানো আছে, যেখানে ক্লান্ত পথিকরা বিশ্রাম নিতে পারে । দূরে গোরু-বাছুর ঘাস খাচ্ছে, আর এক রাখাল ছেলে গাছের নিচে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । সে দেখছে, নীল আকাশে সাদা মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে ।
নদীর ধারে একটি বড় নৌকা খড় বোঝাই করে ঘাটে বাঁধা রয়েছে । চারপাশে কোনো মানুষ নেই, বাতাসে হালকা ধুলো উড়ছে । গ্রামের লোকজন ঘরে ঘুমোচ্ছে । এই নির্জন ও শান্ত দুপুরে মনে হচ্ছে, শুধু মানুষ নয়, পুরো প্রকৃতি যেন শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে । কবি এইভাবেই গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন ।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.