ভরদুপুরে – কবিতা | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBSE) অনুমোদিত ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “সাহিত্যমেলা” । এখানে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘ভরদুপুরে’ কবিতাটি দেওয়া হল ।

ভরদুপুরে – কবিতা

ওই যে অশথ গাছটি, ও তো
পথিকজনের ছাতা,
তলায় ঘাসের গালচেখানি
আদর করে পাতা ।
চরছে দূরে গোরুবাছুর,
গাছের তলায় শুয়ে,
দেখছে রাখাল মেঘগুলো যায়
আকাশটাকে ছুঁয়ে ।

খোলের মধ্যে বোঝাই করে
শুকনো খড়ের আঁটি
নদীর ধারে বাঁধা কাদের
ওই বড়ো নৌকাটি ।
কেউ কোথা নেই, বাতাস ওড়ায়
মিহিন সাদা ধুলো,
ভরদুপুরে যে যার ঘরে
ঘুমোচ্ছে লোকগুলো ।
শুধুই কী আর মানুষ ঘুমোয়,
যে জানে, সে-ই জানে
আঁচল পেতে বিশ্বভুবন
ঘুমোচ্ছে এইখানে ।

Read Also:

সেনাপতি শংকর – গল্প | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি – কবিতা | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

মন ভালো করা – কবিতা | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

পশুপাখির ভাষা – গল্প | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

ঘাসফড়িং – কবিতা | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি – গল্প | ষষ্ঠ শ্রেণি | সাহিত্যমেলা

ভরদুপুরে কবিতার কবি পরিচিতি :

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (জন্ম ১৯২৪): জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা । সত্যযুগ পত্রিকার সাংবাদিকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন, পরবর্তীকালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র সঙ্গে যুক্ত হন । বহুদিন তিনি আনন্দমেলা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন । বাংলা কবিতার জগতে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম । তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে – নীল নির্জন, অন্ধকার বারান্দা, কলকাতার যীশু প্রভৃতি । উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন ।

ভরদুপুরে কবিতার সারসংক্ষেপ :

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘ভরদুপুরে’ কবিতায় গ্রামবাংলার এক অলস দুপুরের চিত্র এঁকেছেন । গ্রীষ্মের দুপুরে একটি অশ্বত্থ গাছ যেন পথিকদের ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । গাছের নীচে যেন নরম ঘাসের গালচে অর্থাৎ কার্পেট পাতা রয়েছে । দূরের মাঠে গরু বাছুর চরছে । রাখাল বালক গাছের নীচে শুয়ে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখছে । শুকনো খড়ের আঁটি বোঝাই করে নদীর ধারে কাদের যেন একটা বড়ো নৌকা বাঁধা রয়েছে । এই নির্জন দুপুরে চারদিকে কেউ কোথাও নেই, বাতাসে সাদা মিহি ধুলো উড়ছে । কবি বলেছেন এই নির্জন দুপুরে শুধু মানুষই নয়, বিশ্বভুবন অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতিও যেন ঘুমিয়ে আছে, যাদের অনুভব করার ক্ষমতা আছে সেই শুধু বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের কথা বুঝতে পারবে ।

ভরদুপুরে কবিতার নামকরণের সার্থকতা :

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘ভরদুপুরে কবিতায় গ্রামবাংলার এক নির্জন দুপুরের অলস, শান্ত, ছায়াময় রূপের বর্ণনা দিয়েছেন । গ্রীষ্মের প্রখর রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ক্লান্ত পথিকদের একটা আশ্রয় চাই। গ্রামের অশ্বত্থ গাছটি ছাতার মতো তাদের ছায়া দান করে । গাছের নীচের নরম গালিচার মতো ঘাসের ওপর পথিকরা আশ্রয় নেয় । দূরে মাঠের মাঝে গোরু-বাছুরগুলোকে চরতে দিয়ে ক্লান্ত রাখাল একটা গাছের নীচে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে । শুয়ে শুয়ে সে নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের আনাগোনা দেখছে । নদীর ধারে বাঁধা খড় ভরতি একটা ব্যস্ততাহীন নৌকা গ্রাম্য দুপুরের আলস্যকে যেন আরও বাড়িয়ে তুলছে । দুপুরের এলোমেলো হাওয়ায় মিহি সাদা ধুলো উড়ছে । লোকজন আলস্যভরে যে যার ঘরে ঘুমোচ্ছে । কবির অনুভব, শুধু মানুষই নয়, সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতিই যেন এই নির্জন, অলস দুপুরে তার আচল বিছিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে । কবির মতে খুব কম লোকই বিশ্বপ্রকৃতির এই ঘুমের খবর রাখে ।

আলোচ্য কবিতায় কবি গ্রামবাংলার এক নির্জন, উদাস দুপুরের অপূর্ব বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছেন । তাই কবিতাটির বিষয়বস্তু অনুযায়ী ‘ভরদুপুরে’ কবিতার নামকরণ সার্থক হয়েছে ।

Follow us:

If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.

Leave a Reply