পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBSE) অনুমোদিত ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই “সাহিত্যমেলা” । এখানে লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পটির প্রশ্ন ও উত্তর (হাতে কলমে) আলোচনা করা হল ।
কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি – প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় কী ধরনের লেখালিখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন ?
উত্তর : গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় অনুসন্ধিৎসা এবং পর্যবেক্ষণমূলক রচনা ও বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন ।
১.২ তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো ।
উত্তর : তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম হল ‘বাংলার মাকড়সা’ ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ কুমোরে-পোকার চেহারাটি কেমন ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে পোকার চেহারা রোগা লিকলিকে এবং দেখতে বেশ ছোটো আকৃতির । এদের গায়ের রং আগাগোড়া মিশমিশে কালো, তবে শরীরের মাঝখানের সরু বোঁটার মতো অংশটি হলদে ।
২.২ কুমোরে-পোকা কী দিয়ে বাসা বানায় ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা ভিজে কাদামাটি দিয়ে বাসা বানায় । তারা উপযুক্ত স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে ছোট্ট মটরদানার মতো গোল করে তা মুখে করে নিয়ে আসে । এরপর সেই মাটি দেয়ালের গায়ে লাগিয়ে ধীরে ধীরে বাসা তৈরি করে । বাসার গাঁথুনি শক্ত করতে মাটি শুকিয়ে নেয় এবং পরে মুখ থেকে লালা নিঃসরণ করে কুঠুরির ভিতরের দেয়ালে প্রলেপ লাগায় ।
২.৩ কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে – তা কীভাবে বোঝা যায় ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে তা তার তীক্ষ্ণ গুনগুন শব্দ শুনে বোঝা যায় । যখন কুমোরে-পোকা বাসা তৈরি করে, তখন মাটি খোঁড়া বা সেটি দেয়ালে লাগানোর সময় একটানা গুনগুন শব্দ করে । এই শব্দ শুনেই বোঝা যায় যে পোকাটি বাসা বাঁধার কাজে ব্যস্ত।
২.৪ মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা কী করে ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা মাকড়সা দেখলেই তার ঘাড় কামড়ে ধরে এবং শরীরে হুল ফুটিয়ে একধরনের বিষ ঢেলে দেয় । কোনো কোনো মাকড়সাকে পাঁচ-সাতবার পর্যন্ত হুল ফুটিয়ে থাকে । এতে মাকড়সা মারা যায় না, কিন্তু পুরোপুরি অসাড় হয়ে পড়ে । তারপর কুমোরে-পোকা মাকড়সাটিকে মুখে করে বাসায় নিয়ে গিয়ে কুঠুরির ভেতরে জমা করে এবং তাতে একটি ডিম পাড়ে ।
৩. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্য করো :
লম্বাটে, স্থান, নির্বাচিত, নির্মাণ, সঞ্চিত ।
উত্তর :
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
লম্বা | লম্বাটে |
স্থান | স্থানীয় |
নির্বাচন | নির্বাচিত |
নির্মাণ | নির্মিত |
সঞ্চিত | সঞ্চয় |
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে অনুসর্গ খুঁজে বের করো :
৪.১ বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয় ।
উত্তর : অনুসর্গ – জন্য
৪.২ সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয় ।
উত্তর : অনুসর্গ – থেকে
৪.৩ সেই স্থানে কাদামাটি চাপা দিয়ে দেখেছি ।
উত্তর : অনুসর্গ – দিয়ে
৫. উপযুক্ত প্রতিশব্দ পাঠ থেকে খুঁজে লেখো :
নির্মাণ, উপযোগী, ভর্তি, সন্ধান, ক্ষান্ত ।
উত্তর :
নির্মাণ → গাঁথুনি, তৈরি
উপযোগী → উপযুক্ত, মনোমতো
ভর্তি → পূর্ণ
সন্ধান → খোঁজ
ক্ষান্ত → নিরস্ত, বন্ধ
৬. তুমি প্রতিদিন পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাকড়সা প্রভৃতি কীট-পতঙ্গ তোমার চারপাশে দেখতে পাও । তাদের মধ্যে কোনো একটিকে পর্যবেক্ষণ করো, আর তার চেহারা, স্বভাব, বাসা বানানোর কৌশল ইত্যাদি খাতায় লেখো ।
উত্তর :
কীট/ পতঙ্গের নাম | পিঁপড়ে |
কোথায় দেখেছ | বাড়ির রান্নাঘরে, মেঝেতে এবং গাছের গুঁড়ির চারপাশে । |
চেহারা/ গায়ের রং | পিঁপড়ে ছোট এবং লম্বাটে । এদের গায়ের রং সাধারণত কালো, লাল বা বাদামি । মাথায় দুটি লম্বা অ্যান্টেনা থাকে এবং ছয়টি পা থাকে । |
কীভাবে চলে | পিঁপড়ে খুব দ্রুত ছুটে চলে । সাধারণত সারি বেঁধে একে অপরের পেছনে হাঁটে । অ্যান্টেনা দিয়ে রাস্তা খুঁজে বের করে । |
কী খায় | পিঁপড়ে মিষ্টি খাবার, চিনি, মধু, পাকা ফল, ছোট ছোট পোকামাকড় এবং কখনো শস্য খায় । |
বিশেষ বৈশিষ্ট্য | পিঁপড়েরা খুব পরিশ্রমী । একসঙ্গে দল বেঁধে কাজ করে । তাদের শরীর থেকে বিশেষ রাসায়নিক গন্ধ নিঃসৃত হয়, যা পথ চেনার কাজে সাহায্য করে । |
বাসাটি দেখতে কেমন | পিঁপড়ের বাসা ছোট গর্তের মতো হয় । এটি মাটির নিচে, গাছের ফাঁকে বা দেওয়ালের ফাটলে দেখা যায় । বাসার চারপাশে ছোট ছোট মাটির ঢিবি থাকতে পারে । |
কীভাবে বানায় | পিঁপড়েরা তাদের মাটি খুঁড়ে বাসা তৈরি করে । এরা মাটি, শুকনো পাতা এবং ছোট ছোট কাঠি ব্যবহার করে বাসা মজবুত করে । বাসার ভেতরে বিভিন্ন কামরা থাকে, যেখানে খাবার মজুত রাখা হয় । |
৭. গঠনগতভাবে কোনটি কী ধরনের বাক্য লেখো :
৭.১ ইতিমধ্যে মাটি শুকিয়ে বাসা শক্ত হয়ে গেছে ।
উত্তর : সরল বাক্য ।
৭.২ একবার হুল ফুটিয়ে নিরস্ত হয় না ।
উত্তর : সরল বাক্য ।
৭.৩ কাজেই এ থেকে মনে হয় যে, কুমোরে পোকা ইচ্ছামতো ডিম পাড়বার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
উত্তর : জটিল বাক্য ।
৭.৪ ভিজা মাটির উপর বসে এবং লেজ নাচাতে নাচাতে এদিক ওদিকে ঘুরে ফিরে দেখে ।
উত্তর : যৌগিক বাক্য ।
৮. নীচের প্রশ্নগুলি নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৮.১ কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি দেখতে লম্বাটে এবং এবড়োখেবড়ো মাটির তৈরি হয় । এটি সাধারণত দেয়ালের গায়ে বা ঘরের আনাচে-কানাচে লেগে থাকে । বাসার ভেতরে ছোট ছোট কুঠুরি থাকে, যেখানে পোকাটি তার ডিম পাড়ে এবং মাকড়সা দিয়ে খাদ্য সঞ্চয় করে । মাটি শুকিয়ে গেলে বাসাটি খুব শক্ত হয়ে যায় ।
৮.২ কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর প্রস্তুতি কীভাবে নেয় ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা প্রথমে বাসা বানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করে । সে স্থানটিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে এবং বারবার দেখে নিশ্চিত হয় । এরপর কাদামাটির সন্ধানে বের হয় । মাটি পাওয়ার পর সেটি মুখে করে এনে ছোট ছোট ডেলা বানায় । সেই ডেলাগুলো একের পর এক জায়গায় বসিয়ে বাসা তৈরি শুরু করে । বাসা বানানোর সময় পোকাটি তীক্ষ্ণ স্বরে গুনগুন শব্দ করে ।
৮.৩ কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটি নিজের ভাষায় লেখো ।
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা প্রথমে উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করে । স্থানটি পছন্দ হলে সে কাদামাটির সন্ধানে যায় । ভিজা মাটি পাওয়ার পর মুখে করে ছোট ছোট ডেলা বানায় । সেই ডেলাগুলো একটির পর একটি এনে দেয়ালে অর্ধ-চক্রাকারে সাজিয়ে রাখে । মাটির ডেলাগুলো দিয়ে বাসার একটি কুঠুরি তৈরি করে । এরপর কুঠুরির ভেতরে লালা দিয়ে প্রলেপ মাখিয়ে দেয় । প্রলেপ শুকিয়ে গেলে কুঠুরির ভেতরে অসাড় মাকড়সা রাখে, ডিম পাড়ে এবং কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দেয় । এরপরে নতুন কুঠুরি বানানোর কাজ শুরু করে । এইভাবে একটি বাসায় চার-পাঁচটি কুঠুরি তৈরি হয় ।
৮.৪ ‘এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে ।’ – কোন অসুবিধাগুলির কথা এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকার বাসা নির্মাণে কয়েকটি অসুবিধার কথা বলা হয়েছে:
- উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে অনেক সময় লাগে ।
- বাসা তৈরির সময় কাদামাটির সন্ধান করতে হয়, যা কাছাকাছি না থাকলে দূর থেকে আনতে হয় ।
- কখনও বাসা তৈরির স্থান নষ্ট হয়ে গেলে নতুন করে আবার মাটি সংগ্রহ করে বাসা বানাতে হয় ।
এইসব কারণে কুমোরে-পোকার বাসা বানাতে অনেক সময় বেশি লাগে ।
৮.৫ কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো । শিকারকে সে কীভাবে সংগ্রহ করে ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা শিকার ধরে তার ডিম থেকে ফোটা বাচ্চাদের খাদ্যের জন্য । শিকার হিসাবে সে সাধারণত ছোট মাকড়সা ধরে । এটাই তার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ।
কুমোরে-পোকা মাকড়সাকে দেখামাত্র তার ঘাড় কামড়ে ধরে এবং শরীরে হুল ফুটিয়ে বিষ ঢেলে দেয় । এতে মাকড়সাটি মরে না, কিন্তু অসাড় হয়ে যায় । এরপর কুমোরে-পোকা মাকড়সাটিকে মুখে করে তার বাসার কুঠুরিতে নিয়ে আসে । সেখানে মাকড়সাকে রেখে তার পাশে ডিম পাড়ে । এইভাবে সে প্রতিটি কুঠুরিতে শিকার জমা করে তার বাচ্চাদের খাবার নিশ্চিত করে ।
৮.৬ ‘বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না ।’ – কখন কুমোরে-পোকা তার বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না ?
উত্তর : লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ গল্পে কুমোরে-পোকা বাসায় ডিম পাড়ার কাজ সম্পূর্ণ হলে এবং প্রতিটি কুঠুরিতে শিকার সংগ্রহ করে জমা করে মুখ বন্ধ করে দেয়ার পর বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না । সে তখন অন্য স্থানে চলে যায় এবং বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় না, কারণ সে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য রেখে গেছে ।
Follow us:
If you like this article, you can Follow us on Facebook.
Also, you can Subscribe to our YouTube Channel.